লিখেছেনঃ আরভান শান আরাফ
শাফিন বর্তমানে একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসায়নে অনার্স করছে । দেখতে খুব সুন্দর তাই ভার্সিটির বন্ধুদের কাছে ও তার খুব দাম । একে তো দেখতে সুন্দর তার উপরে গানো ও করে খুব ভাল । শাফিনের অনেক গুলো বন্ধু আছে তাদের মধ্যে ,সীমা , সাথী , নোমান আর সাদ ।
শাফিন বর্তমানে একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসায়নে অনার্স করছে । দেখতে খুব সুন্দর তাই ভার্সিটির বন্ধুদের কাছে ও তার খুব দাম । একে তো দেখতে সুন্দর তার উপরে গানো ও করে খুব ভাল । শাফিনের অনেক গুলো বন্ধু আছে তাদের মধ্যে ,সীমা , সাথী , নোমান আর সাদ ।
সাদ খুব একটু অন্যরকম । শাফিন ভাল করেই বুঝতে পারে যে সাদ নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চেষ্টা করে । কারন , সে একটা নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে । নিজের পড়াশোনা আর পরিবারকে একটু আর্থিক সাহায্যের জন্যে পার্টটাইম জব করে । খুব মেধাবী ছেলে সাদ ।
তাই শাফিন চাইতো তাকে তার কাছাকাছি রাখতে । কিন্তু , কেন যে সাদ নিজেকে গুটিয়ে রাখত তার উত্তর সে তখনো পায়নি ।শুধু ভেবেছে , হয়তো শাফিন বড়লোক আর সে নিন্মবিত্তের বলে । অথচ শাফিন তো এমন ব্যবহার কখনো করেনি । একবার সাদের পরিক্ষা ফী দিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল ।
শাফিন তাকে একটু হেল্প করতে চেয়েছিল কিন্তু ,সে মুচকি হেসে বলেছিল , চিন্তা করো না একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে । শাফিন আজো খুঁজে পায়নি সেই হাসির অর্থ । এইভাবে শাফিন যতো সাদের সাথে মিশতে চায়তো সাদ ততো দূরে চলে যেতে লাগল ।
একদিন ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ হলে শাফিন সাদকে বলল ,আচ্ছা সাদ বলুতো তুমি আমাকে এতো এড়িয়ে চলু কেনো ? আমি কি খুব খারাপ ? সাদ শাফিনের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল । খুব অপূর্ব সেই হাসি । যে হাসিতে পরম শত্রুও বন্ধুতে পরিণত হয়ে যাবে ।
আর বললু ,এড়িয়ে চলবো কেনো ? সত্যি কথা বলতে কী , আমি তো তোমাদের স্তরের না তাই একটু কম মিশি । শাফিন তা শুনে একটা অট্রহাসি দিয়ে বলল , তুমি এতো বোকা কেনো বলতো ?চলু আজকে তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাব ।
ঐ দিন আর শাফিন সাদের কোন কথা শুনেনি বাইকে সাদকে বসিয়ে ছুটল অচেনা এক গন্তব্যে । বাইকে বসে সাদ অনেক কিছুই ভাবছিল । কী এতো ভাবনা ছিল তার ? তারপর আর কোন দিন সাদ শাফীনকে আটকাতে পারিনি । শাফীন সাদকে তার জীবনে একটা ভাল বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছিল ।
যখন নিজের জন্যে একটা ভাল কিছু কিনেছে তা সাদের জন্যে ও কিনেছে । সাদ নিতে যখন ইতস্ত করতো তখন ছুড়ে ফেলে দিতে চাইতো । সাদ আটকাতো । নিতে বাধ্য হতো । এই ভাবে সময়ের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে কখন যে সাদ ও শাফীনকে আপন ভাবতে লাগল তা সে নিজেই বুঝতে পারিনি ।
শতবার চেষ্টা করেছিল নিজেকে আটকাতে , পারিনি । সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল । শাফীন একা একা বাড়িতে বসে সাদের কথাই ভাবছিল । হঠাৎ , সাদের ফোন আসল । শাফীন সাদের ফোন দেখে খুব আনন্দিত হয়েছিল । কারন এই প্রথম সাদ শাফীনকে কল করেছে ।
ঐ দিন প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে সাদ আর শাফীন অনেকক্ষণ ধরে কথা বলল । কথা বলার প্রসঙ্গে সাদ শাফীনকে একটা প্রশ্ন করেছিল যে , শাফীন ,তুমি কি আমাকে বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাব না ? শাফীন নিজের মত করে উত্তর দিল হ্যা ভাবিত আমার , আপন ভাই ।
শাফীনের উত্তরটা সঠিক ছিল কিন্তু সাদ তাতে তুষ্ট হতে পারিনি । সাদ বাই বলে ফোনটা রেখে দিল । শাফীন কিছুই বুঝল না । শুধু ভাবতে লাগল কোন উত্তর দিলে সাদ খুশি হত ? কিছুই বুঝতে পারল না সে । এরপরে প্রায় দু দিন সাদের কোন খবর নেই ।
বাড়িতে যেয়ে ও পায়নি আর ভার্সিটিতে ও আসতো না ।যেখানে কাজ করতো ,সেইখানে ও পায়নি । শাফীন তো একদম অস্তির হয়ে গিয়েছিল । রাত্রে একটু ও ঘুমাতে পারিনি । সারা দিন তাকে খুঁজেছে .ফোনে বারবার কল করেছে কিন্তু ফোন বদ্ধই পেয়েছে ।
তারপর একদিন রাতে ভাবলো দিনের বেলা না হয় বাড়িতে থাকে না রাত্রে তো অবশ্যই থাকবে । তাই ঐ দিন রাত্রে একদম সাদের রুমের কাছে গিয়ে হাজির । দরজা খোলায় ছিল । শাফীন ভেতরে ঢুকে দেখে সাদ শুয়ে শুয়ে কাঁদছে । তার চোখের পানি গাল বেয়ে কানের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে ।
আর এই দু দিনে ফর্সা মিষ্টি চেহারাটা আরো কালো হয়ে গেছে । সাদের কান্না দেখে শাফীনের চোখে ও জল এসে গেল । সে সাদের নাম ধরে ডাকতেই সাদ চমকে উঠে চোখের পানি মুছে দেখে শাফীন । সাদ অনেকটা ভীত হয়ে বলল , এ কী শাফীন এতো রাত্রে তুমি ?
শাফীন তার উত্তর না দিয়ে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল , কোথা ছিলা তুমি সাদ ? তুমি জানো আমি পাগলের মত খোঁজেছি তোমায় । তারপর অনেক কথা হল । পারস্পারিক বোঝাপরা যখন চূড়ান্ত আর যখন শাফীন বাড়ি যেতে উদ্যত ঠিক তখনি সাদ বলে উঠল ,শাফীন তুমি কী আমার একটা সত্য কথা জান ?
শাফীন ফিরে অবাক হয়ে বলল না । কী বল ? সাদ বলতে লাগল , আমি একজন সমকামী । জীবনে কখনো কারো সাথে কোন খারাপি করিনি । তারপরে ও আমি সমকামী । তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেই দিনই তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি । দিন যত বাড়ছিল ভালবাসা ও ।
আমি জানি . তুমি সমকামী না ।এবং তুমি তা ঘৃণা কর । তাই নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম তোমার কাছ থেকে । কিন্তু , তুমি আমার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল । আমি তোমাকে আমার মত করে চাইতাম ।
আমি এটাও জানতাম যে তা সম্ভব না । তাই নিজেকে তোমার থেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম যাতে তুমি আমাকে গে ভেবে ঘৃণা করতে না পার । কিন্তু , আজকে আর পারলাম না । তাই সব বলে দিলাম । সাদ এক শ্বাসে কথা গুলো বলে ধপ করে বসে পড়ল ।
শাফীন কিছু বলল না । শুধু চুপ থেকে শুনল আর যাওয়ার সময় বলে গেল কালকে ভার্সিটিতে যাবে নতুবা । শাফীন চলে গেল । পরদিন সাদ একটু স্বাভাবিক হয়েয় কলেজে গেল । আর ভাবতে লাগল , শাফীন কী আর তাকে কাছে টানবে না ।
ইত্যাদি ইত্যাদি ভাবতে লাগল আর নিজেকে ধিক্কর দিতে লাগল কেনো এসব বলে প্রিয় বন্ধটাকে হারালো । ক্লাসে ঢুকতেই দেখে সবাই জরো হয়ে দরজা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে ।সাদ ,ঘাবড়ে গিয়ে বলল . কী হল তোদের দরজা ? ছাড় ভেতরে যাব । তাদের মধ্য থেকে একজন বলল , পিছনে তাকা ।
সাদ পিছনে তাকাতেই , ঐদিক থেকে কেউ বলে উঠল , Don't leave me alone .as i realy love you .সাদ ফিরতেই দেখে এক জোড়া মায়াময় নির্ঘুম চোখ হাটু ঘিরে বসে হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকছে । সাদ আর স্থির থাকতে পারেনি । ঝাপিয়ে পড়ল শাফীনের বুকে ।
ভার্সিটির সকল বন্ধুরা এক সাথে আনন্দে চিৎকার করে উঠল । একেই বলে ভালবাসা । আর প্রকৃত ভালবাসা এভাবেই জিতে । হোক তা সমাজ বিরোধী । সমাজের দায়ভার তো আর ভালবাসার না । এর পর থেকে সাদ আর শাফীন আর পিছনে তাকায়নি । জীবনের হাজার রকম বাস্তবতা এক সাথেই মোখাবেলা করেছে ।
No comments:
Post a Comment