Labels

Wednesday, May 21, 2014

"অবিভাজ্যিত ভালবাসা"

লিখেছেনঃ আরভান শান আরাফ

আজ হয়তো আমি ধরনীর সুখি মানুষ গুলোর মধ্যে এমন কেউ একজন যে অতি সহজেই সুখ পেয়েগেছে ।আসলে বলতে গেলে কি আমি সত্যিই সেই সুখ অতি সহজে পেয়ে গেছি ?জানি না ,কারন সেই সত্যি আমার জানা নেই ।সেই সত্যিটুকু আসলেই যে কি ?তা আমার মাত্র ই যে অজ্ঞাত কেবল তা নয় আমার জ্ঞানের ও অজ্ঞাত ।আমার জীবনে আজ আমি যা অর্জন করেছি তা শুধু যে নিন্দুকের নিন্দার ই পণ্য তা নয় বরং তা সমাজের ও গলগ্রহ । তবে আমি সুখি । যখন জন্ম নেই ,বাবা মা তখন নাম রাখেন অহিন ।অহিন মানে যার সীমা নেই ।


হ্যা ,আমি পেরেছি আমার নামের সার্থকতা রক্ষা করতে ।তবে আমার মাধ্যেমে না বরং আমার ভালবাসার মাধ্যমে ।এক সীমাহীন ভালবাসার একক মালিক আমি ।আর সেই ভালবাসা আমায় দিয়েছে তুহিন নামের আমার প্রাণ ।আজ সেই গল্প ই লিখতে বসেছি ।কোথা থেকে যে শুরু করব ?শুরু থেকে শুরু করলে জীবন আমাকে তার আয়নায় কষ্টের এক মূর্তি দেখাবে তার চেয়ে এ ভাল নয় যে ,গল্পটা নাই লিখি । কিন্তু ,কী করব আজ যে আমাকে লিখতেই হবে ।

তাই শুরু থেকেই শুরু করি । তুহিন ভাই বলে বলতেই আমি পাগল ছিলাম আজ থেকে অনেকগুলো বছর আগে ।আমি তখন এস এস সি পড়ছিলাম ।আর তুহিন ভাই কলেজে ।তখন সে কীসে পড়তো জানতাম না ।তবে কলেজে পড়ে ,সে তো আমার থেকে বড়ই ছিল তাই ভাই ডাকতাম ।বাবা মা ছিল না সংসারে ।বড় আপার সাথে কিশোরগঞ্জে একটা তিনতলা ফ্ল্যাটের দু তলাতে থাকতাম ।তুহিন ভাই থাকতো ,নিচ তলায় ।আমি যখন বিকালে ছাদে যেতাম তখন তুহিন ভাইকে দেখতাম ফোনে কথা বলছে ।

আমি যখনি তাকে দেখতাম তখনি দেখেছি ফোনে কথা বলছে ।খুব আস্ত আর মাঝে মাঝে হাসছে ।আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাকে দেখতাম ।একটা টাউজার পড়ে থাকতো ।গায়ে একটা তোয়ালে ।বুকে হালকা পশম ,ফর্সা সুঠাম শরীর আর লাল ঠোট ।মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর এলোমেলো চুল ।গভীর নাভী আর লোমশ বাহু ।এক কথায় গ্রীক দেবতার মতো সুদর্শন দেখতে তুহিন ।আমি তখনো ওনার নাম জানতাম ।কিন্তু ,ভাল লাগতো ।ভাল লাগতো ওনি যখন হাসতো ।ভাল লাগতো ওনাকে ।আমি জানতাম না ,আমার হয়েছিল টা কী !

তবে তখন আমি কোন কামী ছিলাম তা জানি না তবে যে কামী ই হয় না কেন ,আমি ওনাকে ভালবেসেছিলাম আমার প্রথম যৌবনে । যার সাথে কখনো কথা ও বলেনি তাকে । একদিন সন্ধ্যার দিকে ,আপার সাথে মেডিকেল চেকাপের জন্যে হসপিটালে গিয়েছিলাম ।কিছুদিন ধরে খুব জ্বরে ভুগছিলাম ।ফেরার পথে ,অকারণে সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে যায় ।যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি ,আমি বাসায় আর আমার সামনে তুহিন ভাই ।আপা ,দুলা ভাই তো আছেই সাথে আরো কয়েকজন ।

আমার জ্ঞান ফেরার পর পর ই তুহিন ভাই চলে যান ।পরে অবশ্য আপার কাছ থেকে শুনতে পায়ছে আমি জ্ঞানহারালে .তুহিন ভাই আপাকে আমায় বাসায় নিয়ে আসতে সাহায্য করেন । পরে যখনি ভাবতাম যে তুহিন ভায়ের কাধে আমার মাথা রেখে বাসায় ফিরেছি ততোই ভাল লাগতো । এর দু দিন পর খেলার মাঠের দিকে একবার হাঁটতে গিয়েছিলাম ।সেখানে ,তুহিন ভাই ও অন্যরা খেলছিল ।আমি দাঁড়িছিলাম একটা জারুল গাছের নিচে ।হঠাৎ ,খেয়াল করলাম তুহিন ভাই এদিক থেকেই দৌড়ে আসছে ।আমার বুকের কম্পন তখন বেড়ে যাচ্ছিল ।

ইচ্ছে করছিল মাটি ফেটে যাক আমি পালায় ।তুহিন ভাইকে ভালতো বাসতাম ঠিক কিন্তু কথা তো কবো বলেনি তার উপরে নামটা জেনেছি কালকে মাত্র । যা হওয়ার তাই হলো তুহিন ভাই আমার সামনে এসে দাঁড়ালো ।বর্তমানে কেমন আছি জানতে চাইলো ।তখন আমি তরঙ্গের স্থিতিস্থাপক ধর্ম প্রদর্শন করছিলাম ।মানে কাঁপছিলাম ,আর ঘামছিলাম ।কেন তা জানতাম না ,হয়তো তা ভালবাসার উষ্ণতা । আমি তার চোখে আমার প্রতি মায়া দেখছিলাম ।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলাম যে হ্যা আমি ভাল ।সে আরো কিছু জানতে চাইলো আমি উত্তর দিলাম ।

সেই প্রথম তার সাথে আমার কথা ।ভাল লেগেছিল তার কথা খুব ভাল লেগেছিল ।ঐদিনের পর থেকে তুহিন ভাই প্রায় আমার সাথে কথা বলতো ।আমিও ওনার সাথে কথা বলতে কেমন আগ্রহী ছিলাম ।ওনাকে একটিবার দেখার জন্যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতাম ।ওনি যখন বাসায় ফিরতো তখন আমাকে বারান্দায় দেখতে পেয়ে শুধু একটা মুচকি হাসি দিত ।ওনার সেই হাসি নিয়ে আমি সারাটা দিন পার করতাম ।এই ভাবে যতদিন যেতে লাগলো ,আমি তাকে ততো ভালবাসতে লাগলাম ।যত দিন যেতে লাগলো আমি ততো তার প্রতি আগ্রহী হতে লাগলাম ।

কিন্তু ,তুহীন ভাই ছিল বেখেয়ালী ।তার প্রেমে এক সদ্য যৌবন প্রাপ্ত যুবক পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তার কোন ভুক্ষেপ নেই ।তখন কষ্ট লাগতো । এক তরফা ভালবাসার এই একটাই কষ্ট ।যেখানে শুধু আমি আর আমি ,যাকে ভালবাসি সে তো বেখবর । এস এস সির পর ,কলেজে ভর্তি হব ।দুলাভাই তার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত আর আপা তার জব নিয়ে ।কে নিবে দায়িত্ব ?ভাগ্যসেবার আমার সাথ দিল ,আপার অনুরোধে তুহিন ভাই আমাকে ভর্তি করানোর দায়িত্ব নিল ।সে তার দায়িত্ব পালন করে তুষ্ট আর আমি তার সাথে চলতে পেরে ।

তারপর আমি প্রায় তুহিন ভায়ের সাথে কলেজে যেতাম ।একি রিক্সায় চড়ে ।যেতে যেতে সে কতো কথায় না বলতো ।কিন্তু .আমি তাকে চেয়ে কেবল দেখতাম ।সে খেয়াল করতো ,আমি তাকে একপলকে দেখছি ।মাঝে মাঝে চোখে চোখ আটকা পড়ে যেত ।আমি লজ্জা পেতাম ।চোখ সরিয়ে নিতাম । রাত্রে ভাল ঘুম হতো না ।খালি তুহিনের কথা মনে পড়তো ।ওর কথা ভেবে পাগলের মতো হাসতাম ,একা একা ওর সাথে প্রেমালাপ করতাম ।কল্পানে ভালবাসার গভীরে চলে ।একদিন রাত্রে ঘুম আসছিল না ।তাই গিয়েছিলাম ।

এমনিতে আমি ছাদে তখন কম যেতাম ।একদম কম ।ঐদিন গেলাম ।গিয়ে দেখি তুহিন ভাই দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে ।আমাকে দেখে এগিয়ে আসলো ।জানতে চাইলো ছাদে আসার হেতু ।বললাম ,ঘুম আসছে না ।সে হাসলো ,আর বলল ,নিশ্চয় প্রেমে পড়ছু । আমি একটু মজার সুরেই বললাম ,প্রেমে তো দু বছর আগেই পড়েছি ।কিন্তু সাহস পায় কোথায় মানবকে মনের কথা বলার ? সে আমার কাধে হাত রেখে বলল ,মানব নাকি মানবী ?আমি বললাম .কেন ?মানব হলে দোষ আছে ?এইবার সে একটু সিরিয়াস ভাবেই বলল ,এই মানব আমি নয় তো ?

কথাটা শুনে হার্টবীট বেড়ে গেল ।বুক কাঁপতে লাগলো ।কিছু না বলে দাঁড়িয়েছিলাম ।সে পাশেই ছিল ।দু জনেই চুপ ছিলাম ।আমি বললাম ,এইবার চল যায় ।সে বলল ,যাওয়ার আগে একটা কথা বলতো ,তুমি কি আমাকে ভালবাস ? আমি ,একটু সংকোচিত হয়ে ভয়ে ভয়ে বললাম ,হ্যা । বলেই চলে আসি ।

পরের দিন সকালে ,ঘুম থেকে ওঠে শুনি কলেজে না যেতে কারন ,কারন দাঙ্গা চলছে ।তাই আর গেলাম না ।আপা দুলাভাই যে যার কাজে ।কলেজে যেতে পারব না মানে ,তুহিন ভাইকে মিস করবো ।হ্যা ।রুমে বসে অযথা টিভির চ্যানেল পাল্ঠাচ্ছিলাম ।কিন্তু ,মনে পড়ে আছে তুহিন ভায়ের কাছে ।হঠাৎ ,দরজায় লব্দ ।আমি দরজা খোলতেই দেখি তুহিন ।তার হাতে কিছু লাল গোলাপ আর অন্যহাতে মিষ্টি ।আমাকে এড়িয়ে রুমে ডুকে দরজা লাগালো ।

তারপর ,মুখে একটা অতিসুন্দর হাসি এনে বলল ,আমি ভূমিকা করে কিছু বলতে পারব না ।এই ফুল তোমার জন্যে ।মিষ্টিও তোমার আর আমিও ।মানে অহিন তোমায় আমি ভালবাসি ।বলেই ফুলগুলো আর মিষ্টি আমার হাতে দিল ।আনন্দে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম ।তুহিন আমাকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলো ।তার লোমশবুকে এই প্রথম আমার ঠায় হল ।এতো ভালবাসা আমার জন্যে তার বুকে !আমি তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।সে আমার চোখ দুটিতে চুমু খেল ।

ঐদিন ,আমার ভালবাসার প্রথম দিন । তারপর অনেক কষ্ট করেছি ।জীবনের তাগিদে তাকে ছেড়ে থেকিছি ।কষ্ট পেয়েছি ।সে ও কষ্ট করেছে ।পরিবারকে অগ্রাহ্য করে ।সব ছেড়ে আমার কাছে ছুটে এসেছে ।দুজনে ছোট একটা ঘর বানিয়েছি ।জেল খেটেছি ।তারপরে ও ভালবেসেছি ।শত দুঃখ কষ্ট ,লাঞ্চনা আর নির্যানের পরে ও আমাদের ভালবাসার নিজেদের মতো করে বেঁচেছে । শত কষ্টের পর আজ সুখে আছি ।আজ আমি আর তুহিন ।আজ নেই বড় আপা ,দুলাভাই আজ নেই তুহিনের বাবা মা ।নেই তাদের কথার অত্যাচার ।নেই আমার প্রতি করা তাদের মিথ্যা চুরির আর সন্ত্রাসীর মামলা ।আজ এক অবিভাজ্যিত প্রেমের মালিক আমি আর আমার তুহিন ।


বিঃ দ্রঃ গল্পটি আরিফ ভাই এর জীবন কাহানী থেকে নেয়া। আবির ভাই আমাদের সাথে আপানার জীবন কাহানী শেয়ার করার জন্য।

No comments:

Post a Comment