Labels

Monday, May 26, 2014

"অনুক্ত প্রেম"

লিখেছেনঃ আরভান শান আরাফ

ইমরানকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি । কত যে মারপিট আর ঝগড়া করেছি তার অন্ত নেইআজ আমি বিবিএ পড়ছি । ইমরানো ও । দেখতে দেখতে জীবনের পথে চলতে চলতে কখন যে আমরা এইখানে এসে পৌছলাম তার সন্ধান আজো আমি পাইনি । 

যখন আমি বড় হতে লাগলাম তখন থেকেই খেয়াল করতাম ইমরানের প্রতি আমার ভালবাসা আর আকর্ষণ খুব বেশি । ওর পশমী বুক আর মায়াময় চোখ দুটি আমাকে খুব টানতো । একদিন প্রকৃত অর্থেই বয়স বাড়ল আর বুঝতে বাকি রইল না যে ,আমি সমকামী । 


কীভাবে , কেনো ,কখন আমি সমকামী তা অবশ্য আমার জ্ঞানের বাহিরে ছিল তবে সমকামীতার অনূভোতি আমাকে ভিতরে ভিতরে তলিয়ে দিচ্ছিল । যখন বুঝতে পারলাম ইমরানের প্রতি ,আমি দুর্বল আর সমাজ , ধর্ম আর জাতি তা সমর্থন করে না তখন নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইলাম । 

কিন্তু পারলাম আর কৈ ? ঐ দিন রাত্রে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবলাম ইমরান থেকে দূরে সরে যাব । তার সাথে কম মিশব । তাহলে হয়তো ,সমকামীতার ভয়ানক যন্ত্রনা হতে বাঁচতে পারব ।তাই সিদ্ধান্ত মোতাবেক কয়েকদিন কলেজে যাওয়া বন্ধ করে ইমরানের নাম্বারটা ব্লক করে বাসায় বন্ধি হয়ে রইলাম ।

এই ভাবে তিনটা দিন কাটল ।চতুর্থ দিনের মাথায় বিকাল তিনটার দিকে , ইমরান আসল আর সাথে তার মা । আমি আন্টিকে দেখে সালাম দিয়ে বসতে বলে আম্মুকে ডাকতে গেলাম । ইমরান ও আমার সাথে সাথে গেল , আম্মুকে ডেকে ,ঘুরে দেখি সামনে ইমরান । 

দেখে মনে হচ্ছিল ,আমার প্রতি খুব রেগে আছে । ইমরান খুব জোরে আমার হাতের পেশিতে একটা ঘুষি দিয়ে বলল , কীরে ,তুই মরছিলে নাকি ?তর কোন খবর টবর কিছু নেই । আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম , মরে তো কবেই গেছি এখন তো শুধু বেঁচে থাকার রং মেখে বেঁচে আছি । 

তুর কথা বল ? কী মনে করে একে বারে আন্টিকে সাথে নিয়ে এসেছিস ? ইমরান বলল , ভেবেছিলাম আমার সাথে রাগ করছিস তাই রাগ ভাঙাতে আম্মুকে নিয়ে এসেছি । ঐদিন ,আমার প্রতি যে ইমরানের একটু হলেও টান আছে তা বোঝার বাকি ছিল নাসিদ্ধান্ত নিলাম যা হবার হবে । 

ইমরানের পাশেই রব । প্রেমী হয়ে না পেলেও বেস্ট ফ্রেন্ড করে তো পাব ? তারপর দিন যতো যেতো লাগলো আমি ইমরানকে আরো ভালবাসতে লাগলাম । আমার সমকামী চাহীদা মাঝে মাঝে ইমরানকে তলিয়ে দিতো আমার মনে , মাথা ঝাড়া দিয়ে তা ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করতাম । 

কিন্তু , সমকামীতা তো আর মাথার উপর উড়ে বসা জল ফড়িং না যে মাথা ঝারলাম আর উড়ে গেলো । তাই যতো ইমরানের সাথে চলতে লাগলাম ততো প্রেম বাড়তে লাগল । মুখ খুলে বলার মত কোন সাহস আমার ছিল না । তাই বলা ও হলো না । 

একদিন ইমরানের বড় ভাইয়ার মোবাইল থেকে কল আসল । ফোনটা রেসিভ করে বুঝতে পারলাম ওনি খুব কষ্টে কাঁদছে আর গলা কাঁপছে আমাকে ওনি দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলল ,আমি খুব স্পীডে বাইক চালিয়ে হাসপাতালে গিয়ে শুনি , ইমরান তার এক হাতের রগ কেটে ফেলেছে । 

খুব রক্ত ক্ষরণ হয়েছে । ডাক্তার বলেছে অতিশিগ্রী প্রচুর রক্ত লাগব । আমি তা শুনে ঐখানে স্থির থাকতে পারিনি । ভাইয়া আমাকে শুধু এতোটুকু বলেছিল আমার আর তার রক্তের গ্রুপে মিল আছে কিনা ? তারপর , ইমরানকে রক্ত দিলাম । যতোটা লাগেছিল । আরো দুই ব্যাগ কিনতে হয়েছিল । 

আমি মনে হয় কষ্টের তীব্রতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম । জ্ঞান ফেরার পর সবাই আমার শত মুখী প্রশংসা করল । কিন্তু , তখন খুব কষ্ট লেগেছিল যখন শুনলাম একটা মেয়ে শিলাকে বোঝাতে যে, সে তাকে কতটুকু ভালবাসে তাই হাতের রগ কেটেছিল । 

খুব কষ্ট লেগেছিল এই ভেবেযে যে ইমরানকে আমি ঠিক এতোটা ভালবাসি সেই ইমরান কোন দিন ও আমার হবে না । সে শিলাকে প্রকৃত অর্থেই গভীর ভালবাসে । আমি অন্যসবার নিষেধ সত্তেও দুর্বল শরীর নিয়ে , ইমরানের কাছে ছিলাম প্রায় পাঁচ দিন । 

এই পাঁচদিনে , শিলা ও অনেকবার এসে তাকে দেখে গেছে । খুব সাজগুজ করে । দেখে বুঝতেই পারলাম না যে ,এই মেয়ে সত্যিই কী ইমরানকে ভালবাসে ? না বাসতে পারবে । পরক্ষণে চিন্তা করলাম সে না বাসুক ইমরান তো তাকেই ভালবাসে । 

যেখানে আমি একটা দায়িত্ববান বন্ধু ছাড়া আর কিছুই না । ইমরান যতদিন অসুস্থছিল ঠিক ততদিন আমি রোজা রেখেছি , রাত জেগে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি । আমি সমকামী তাই হয়তো ,আমার রোজা , তাহাজ্জুত কিছুই আল্লাহ কবুল করেনি তাই একদিন আমিই খুব অসুস্থ হয়ে গেলাম ।

আব্বু আম্মু একপ্রকার জোর করেই আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসল । প্রায় এক সপ্তাহ পরে ইমরান সুস্থ হল । স্বাভাবিক ভাবে চলতে শুরু করল । কিন্তু , আমি শারিরীক দুর্বলতায় বিছানা ছাড়তে পারছিলাম না । খুব ইচ্ছে করছিল তখন ইমরানকে একবার গিয়ে দেখে আসতে কিন্তু , সাধ্যে কুলায় নি । 

ইমরান ও আসেনি একটি বার আমাকে দেখতে । শুনছি , সে নাকি খুব ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছে তার মনের মানুষ শিলাকে নিয়ে । কথাটা শুনে বুকে চিনচিন ব্যথা করে ওঠল । তারপরে ও দুর্বল শরীরে শুকনো মুখে একটা মুচকি হাসি দিলাম  

ঐ দিন ,কলেজের সব বন্ধুরা আমাকে দেখতে এসেছিল । ভেবেছিলাম ইমরান ও আসবে । কিন্তু সে আসেনি । কে যেনো বলছিল সে ,শিলাকে নিয়ে মার্কেটিং এ গেছে । ঐ দিন কেনো জানি দু , চোখ বেয়ে পানি ঝড়তে লাগল । একজন বলল চিন্তা কর যে ,ইশাণ তাকে এতো রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে তুলল সে ইশাণকেই দেখতে ও আসেনা ।বেইমান একটা । 

অন্যের মুখে ইমরানের নামে গালি ভাল লাগে নি তাই তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম । একদিন আমিও সুস্থ হয়ে গেলাম । মোবাইলে সিমটা ঢুকিয়ে ইমরানকে কল করলাম । নাম্বার ব্যস্ত ছিল তাই আর চেষ্টা না করে তাদের বাড়ির দিকে ছুটলাম । বাড়িতে পৌছে দেখি , অনেক মানুষ । 

আন্টি আমাকে দেখে আনন্দে জড়িয়ে ধরে ভেতর ঘরে নিয়ে বলল যে ইমরানের বিয়ে শিলার সাথে তাই আমার অনেক দায়িত্ব । আমি সেখানে কিছু না বলে ইমরানের রুমে যায় । গিয়ে দেখি সে শিলার সাথে ফোনে কথা বলছে আমাকে দেখে ফোনটা রাখি বলে কেটে দিয়ে ওঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলল ,ধন্যবাদ তুই এসেছিস বলে ।

আমি অশ্রুভরা চোখে ইমরানের কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম , আমি তোকে ভালবাসিরে খুব ভালবাসি । আজথেকে আমার দায়িত্ব শেষআমি চলে যেতে যেতে দেখলাম ইমরান ঠাই দাঁড়িয়ে আছে । আর আমি অশ্রুভরা চোখ আর বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরছি ।আমার প্রেম অনুক্তই রয়ে গেল । শুধু বল হলো ভালবাসি ।

No comments:

Post a Comment