লিখেছেনঃ আরভান শান আরাফ
বাবা মারা যাওয়ার পর এক প্রকার মাথায় আকাশটাই ভেঙে পড়ছিল ।কি করবো ,কোথা যাব কোন পথ ছিল না ।ছোট দুটি বোনের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল ।আমার আর বিএ পাশ করাটা হয়নি ।মা ধীরে ধীরে চিন্তায় অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পড়ে গেল ।আমি একটা চাকরির জন্যে কত জনের ই দারস্ত ই না হলাম ।কিন্তু ফল মহাশূন্য ।দু একটা টিউশনি করিয়ে ও সংসারের বিশাল ভরটা টানতে মরণের মতো লাগছিল ।কী করি তা ভাবতে ও পারতাম না । অবশেষে মা পরিচয় দিল বাবার বন্ধু শহরের ধনী এক লোকের ।বললু যে ,তার কাছে গিয়ে দেখতে পারি ,যদি একটা কাজ পায় ।
বাবা মারা যাওয়ার পর এক প্রকার মাথায় আকাশটাই ভেঙে পড়ছিল ।কি করবো ,কোথা যাব কোন পথ ছিল না ।ছোট দুটি বোনের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল ।আমার আর বিএ পাশ করাটা হয়নি ।মা ধীরে ধীরে চিন্তায় অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পড়ে গেল ।আমি একটা চাকরির জন্যে কত জনের ই দারস্ত ই না হলাম ।কিন্তু ফল মহাশূন্য ।দু একটা টিউশনি করিয়ে ও সংসারের বিশাল ভরটা টানতে মরণের মতো লাগছিল ।কী করি তা ভাবতে ও পারতাম না । অবশেষে মা পরিচয় দিল বাবার বন্ধু শহরের ধনী এক লোকের ।বললু যে ,তার কাছে গিয়ে দেখতে পারি ,যদি একটা কাজ পায় ।
বড়লোকরা খুব ইতর প্রকৃতির হয়ে থাকে বলে আমার ধারনা ছিল ।তাই কাজের জন্যে কোন বড়লোকের ধারস্ত হওয়া আমার কাছে খুব ই খারাপ লাগতো ।কিন্তু ,পথ খোলা ছিল না আমার ।মার শরীরটা খারাপের চেয়ে খারাপ হতে লাগলো ।বোনদুটি সেলাই করা কাপড় পড়তে শুরু করলু ।আর আমার চোখে যে তা তীব্র থেকে তীব্রতর কষ্টের মতো ছিল । অবশেষে বাধ্য হয়ে এক দিন গেলাম ।কিন্তু ,ওনাকে পায়নি ।তাই আরেকদিন গেলাম ।আমাকে দারোয়ান বসিয়ে গেল শোফাতে ।আমি বসে আছি নরম শোফাতে ।বড়সর রকমের একটা ড্রয়িং রুম ।
আমি যে দিকে বসে আছি তার বা পাশে একটা বুক সেলফ ।তাতে অনেক বই শোভা পাচ্ছে ।দেয়ালে বিখ্যাত কিছু চিত্রশীল্প ।বসার রুমটা দেখে যা মনে হলো তাতে স্পষ্ট যে তারা খুব শৌখিন মানুষ ।একবার চোখ ভুলিয়ে দেখে নিলাম সব ।কিন্তু ,খুব ঘাবড়ে ছিলাম ধনী লোকেরা খুব সহজে কাছে টানে আর মানহানি করতে ও একটু ভাবে না । প্রায় দশ পনের মিনিট পড়ে একজন ধীরে ধীরে নামলো ।মাঝ বয়সী একজন লোক ।মাঝ বয়সি হওয়া সত্বে ও চেহারাটা একটা তরুণ তরুণ ভাব ।কেমন যেন মুচকি হেসে হেসে এগিয়ে আসছিল । ওনি আসতেই আমার পাশে বসল ।আমি ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিয়ে দাঁড়ালাম ।ওনি বসতে বললে আমি বসলাম ।
ওনি আমার দিকে তাকালো আর নাম জিজ্ঞেস করলো ।আমি বললাম ,জ্বী আমি শুভ্র ।ওনি গম্বীর স্বরে বললু ,হ্যা .আমি শুনেছি তোমাদের পরিবারের কথা ।তোমার বাবা আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল । তারপর আরো অনেক সহানূভোতীমূলক কথা বলে আমার কাধে হাত রাখলো । সব বড়লোকেরা এক রকম যে না এই ধ্যান ঐদিন পাল্ঠে ছিল ।ওনি এতোটাই ভাল যে আমার মন ভরে গেল ওনার ব্যবহারে । একটা কাজ হলো আমার ।ওনার ব্যক্তিগত ম্যানেজারের ।কাজ বেশি ছিল না কিন্তু বেতনটা ভাল ই ছিল ।পরিবারের অভাব পূরণ হলো ।বোনদেরকে আবার পড়াশোনাতে ভর্তি করালাম ।ভাল লাগতো । জীবনের কষ্টের দিনখুলো আচমকা পাল্ঠাতে লাগলো ।
আমার ভেঙে পড়া মন আবার গড়তে লাগলো ।মাকে ডাক্তার দেখালাম ।ওনি ধীরে ধীরে সুস্হ্য হচ্ছিল ।সব কেমন যেন কল্পনার মতো লাগছিল । জায়েদ স্যার যেন আমার ত্রাণকারী হিসেবে আভির্ভূত হলো ।ওনি যেন রূপকথার কোন চরিত্র যার ছোয়াতে মানব জীবনের সব ব্যর্থতা নিমিষেই বিলিয়ে যায় ।ওনার প্রতি ধীরে ধীরে আমার শ্রদ্ধা আর সম্মান বাড়তে লাগলো ।আর ওনিও আমাকে ওনার অতি আপন করে নিয়েছিল ।শুধু ওনি না ,ওনার স্ত্রী ,আর দু মেয়ে স্নিগ্ধা আর অহনা ও ।ওরা দুজনে জমজ ।তখন ক্লাস এইটে পড়তো ।খুবি ভাল ।আমাকে ওরা নিজের ভায়ের মতো কাছে টানতো ।আমাকে ছাড়া কখনো রাতে খেত না ।সকালে ওদের সস্কুলে দিয়ে আসতাম ।
আর স্যারের স্ত্রী আমার অনেক খেয়াল রাখতো ।সবচেয়ে ভাল লাগতো যখন প্রতিবার শপিং করার সময় আমার জন্যে ও কিছু আনতো ।এক কথায় বলতে গেলে আমি তাদের পরিবারের আরেকজন সদস্য হয়ে গিয়েছিলাম । ছিলাম তো স্যারের ম্যানেজার কিন্তু ,থাকতাম আরেকটা ছেলের মতো । স্যারের আরেকটা ছেলে ছিল ,রোহান ।তাদের বড় ছেলে ।কানাডা আছে পড়াশোনার জন্যে ।আমি রোহানের গল্প ই শুনেছিলাম কিন্তু দেখিনি ।অহনার ভাষ্য মতে তার ভাইয়া আমার মতো স্মার্ট আর স্নিগ্ধার মতে আমার চেয়ে ও বেশি কারন তার ভাইয়ার হাসি ।রোহানের গল্প শুনতে শুনতে মনে তাকে দেখার ইচ্ছে আক্রমণ করে বসলো তিল তিলে ।
একদিন ,সবাইকে খুব খুশি দেখাচ্ছিল ।দু তলায় আমার রুমের পাশে যে রুমটা ছিল এতোদিন তালাবদ্ধ সেইটা খুলে গোছাতে লাগলো ।আমার হাতে প্রায় পঞ্চাশ খানা বয়ের একটার লিস্ট দিয়ে বইগুলো আনতে পাঠালো ।ঐদিন আর কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারলাম না কে আসবে । পরের দিন সকালে নাস্তা শেষে অহনাকে জিজ্ঞেস করলাম ,কী ঘটছে এসব ?অহনা অট্ট হেসে বলল ,ওমা সে কি !তুমি জানো না আজকে রোহান ভাইয়া আসবে তো ।বলেই দৌড়ে চলে গেল ।আমি কিছু সময়ের জন্যে ভুলে গেলাম নিজেকে রোহান নামের ছেলেটা কেমন হতে পারে এই ভাবনায় ।সে পারবে তো অন্যদের মতো আমাকে আপন ভাবতে ।নাকি সব কেড়ে নিবে যা পেলাম ।
সন্ধ্যায় ফিরে রুমে শুয়ে একটা বই পড়ছিলাম ।নিচ হতে রোহানের আগমনের হুল্লোড় শুনা যাচ্ছিল ।আমার ও খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তাকে একবার দেখে আসতে ।তাই রুম থেকে বের হয়ে সিড়িতে দাঁড়ালাম ।এখান থেকে তাকে দেখাযাচ্ছিল স্পষ্ট ।আমি অবাক হয়েছিলাম স্যারের ছেলেকে দেখে ।সত্যি খুব স্মার্ট সে ।সে পড়েছিল একটা কাল ব্ল্যাজার ,চোখে চিকন গ্লাস ,ব্ল্যাজারের নিচে সাদা টি শার্ট ,দু দিকে ভাঁজ করা এলোমেলো চুল ,স্নিগ্ধ চোখ আর সরু ভ্রু ।সে কথা বলছিল হেসে হেসে ।আমি তাকে দেখছিলাম ।বুক কাঁপছিল তাকে দেখে ।সে যেন গ্রীক দেবতা গ্যানিমেট থেকে ও সুদর্শন ।
সে স্রষ্টার এক চির সুন্দর সৃষ্টি ।ঐদিন প্রথমবারের মতো আমি কোন ছেলেকে দেখে এতো মুগ্ধ হয়েছিলাম । রোহান আসলো ,দু দিন হলো ।কিন্তু ,একবারের জন্যে ও কেউ কারো সাথে কথা বলিনি ।শুধু ,হয় আমি ওকে তাকিয়ে দেখেছি অথবা ও ।যখন রোহান আমার দিকে তাকাতো তখন কেন যে ,হার্ডের কম্পন বেড়ে যেতো ।আর যখন আমি তাকাতাম তখন খেয়াল করতাম ,ওর ফর্সা চেহারা লাল হয়ে ওর রূপ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে । ও আসার দু দিন পর ,তৃতীয় দিন ওর বাথরুমের কল নষ্ট হয়ে গেল ।তাই আমার রুমে আসলো ।আমি তখন বেডে শুয়ে শুয়ে মার সাথে কথা বলছিলাম ।দরজাতে কড়া নেড়ে ও ভেতরে ঢুকলো ।
আমি ওকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠলাম ।ও এসে ওর সমস্যার কথা বলে বাথরুমে যেতে চাইলো ।আমি বললাম ,হ্যা যান ।অসুবিধা নেই ।ও হাসলো ।বলল ,আপনি করে বলছু কেন ?আমি কি বাবার বয়সের বলে হাসতে লাগলো ।আমি ও মুচকি হেসে বললাম ,ঠিক আছে তুমি করে বলবু ।বলে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম ।ওর গালের খোচা খোচা দাড়ি আমার দৃষ্টি আটকে দিল ।তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে ।সে ও আটকে ছিল । ভয় হচ্ছিল তাই চোখ সরিয়ে নিলাম । ও গোসল করতে ভেতরে ঢুকলো ।আমি ভাবছিলাম ,আমি কি করছি ।আমি কি তাকে ভালবেসে ফেলেছি ।আমি যদি তাকে ভালবেসেই ফেলি তবে যে শুধু কষ্ট পাপ ।সে বের হয়ে আসলো ।
আমি ফিরে তাকালাম তার দিকে ।তার ভেজা চুল ,লাল আভা যুক্ত ঠোট ,আর ভেজা চোখ কী অপূর্ব ই না লাগছিল তাকে ।ভাবনা ভুলে তাকিয়ে ছিলাম ।তার গায়ে একটা তোয়ালে জড়ানো ।লোমশ পেশি বহুল বাহু ।তার গভীর নাভী আর সরু চিকন পেটের পশমের রেখা আমাকে আবদ্ধ করে দিল ,মানব প্রকৃতির এই রূপ দর্শনে ।সে ও তাকিয়ে ছিল ।পরক্ষণে কিছু না বলেই চলে গেল । দিনগুলো চলে যাচ্ছিল ।তার প্রতি আমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম ।তার সাথে কথা বলার বাহানা খোঁজতাম তার পাশে বসে কথা বলার ফুরসত খোঁজতাম ।বুঝতে পারতাম সে ও তাই চায়তো ।
ধীরে ধীরে অফিস থেকে বেশি সময় রোহানের সাথেই দিতে লাগলাম ।ভাল লাগতো ভাল লাগার মানুষটার পাশে বসে কথা বলতে ।পরক্ষণে আবার ভাবতাম তা ঠিক নয় কারন ,রোহানরাই আমার ত্রাণকারী ।তাদের পরিবারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবো না ,সমাজের অসংজ্ঞায়িত ভালবাসার দোহায় দিয়ে । রোহানকে আমি ভালবাসতাম সত্য ।কিন্তু ,একটা সময় পেছাতে শুর করলাম ।কারন ,যে ভালবাসার কোন মূল্য নেই তা বাসা কি দরকার ?কিন্তু ,রোহান ততোই আগাতে লাগলো ।সে যেন মন থেকে আমাকে চায়তে শুরু করলু ।কিন্তু ,তখন আর ভালবাসার কুরবানী করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না ।
তাই হাজার কষ্ট নিয়ে আত্মগর্ব আর বিশ্বাসঘাতকের পরিচয় না দিয়ে জায়েদ স্যারের কাছে বলে কিছু দিনের জন্যে বাড়ি চলে আসলাম ।ইচ্ছে রোহানকে ভুলা ।আর সে চলে গেলে আবার ফিরে যাওয়া । বাড়িতে এসে কিছুই ভাল লাগতো না ।সারাক্ষণ রোহানের কথা মনে পড়তো ।আর পুকুর পাড়ে বসে কাঁদতাম ।জানি না কেন জানি তার কথা খুব মনে পড়তো ।ইচ্ছে করতো ছুটে গিয়ে বলি রোহান আমি তোমাকে ভালবাসি ।বাড়ি ফিরার এক সপ্তাহপর বিকালের দিকে জায়েদ স্যার আর আন্টি আসলো আমাদের বাড়িতে ।এসেই আন্টি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললু যে,রোহান হাসপাতালে আর আমাকে দেখতে চায়ছে ।
আমি আন্টির কথা শুনে চমকে ওঠলাম ।তাদের অপেক্ষা না করে সোজা গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে ।গিয়ে দেখি রোহান বালিশে হেলান দিয়ে বসে ।আমাকে দেখেই হাসলো ।আমি পাশে যেতেই আমাকে জড়িয়ে ধরল ।ধরে কেঁদে দিল বললু ,কোথায় গিয়েছিলে ।আমার খুব কষ্টে কাটছিল দিনগুলো ।আর আমি কষ্ট পেলে মরে যেতে চায় বলে পাগলের মতো ।হাসতে লাগলো ।আমার দু গাল ছোঁয়ে বললু ,হৃদয় আমি তোমাকে ভালবাসি ।তোমাকে ছাড়া আমার একটা দিন ও চলবে না । আমি ফেরাতে পারিনি তার আবেদন ।সব ভুলে তার কপালে চুম্মন করে ভালবাসার টানে জড়িয়ে ধরলাম ।
আমি চলে যাওয়ার পর কি হয়েছিল তা জানি নি ।তবে রোহানের পরিবার আমাদের ভালবাসা মেনে নিল । আর হয়তো এর জন্যেই রোহানকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল । আমি আর রোহান এখন কানাডাতে আছি ।আমার এখানে আসার ব্যবস্থ্যা তারা ই করেন যারা আমাকে নিজেদের পরিবারের একজন ভাবে ।আজ আমি অনেক সুখি রোহানের জন্যে ।সে আমার ভালবাসা ।আমার জীবনটাকে সে এতো সুন্দর করেছে । আমি সত্যিই খুব সুখি ।
(বিদেশী গল্পের কাহিনী হতে ।চার্লস পল নামক লেখকের উপন্যাস দ্যা ক্রিস্তফ থেকে )
No comments:
Post a Comment