Labels

Wednesday, June 11, 2014

"একটা প্রেমের গল্প "

লিখেছেনঃ আরভান শান আরাফ

বেশি দিন তো হয়তো তাকে আমি জানি ।এইতো দু বছর হবে । আমি ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার ছেলে ।একটা নদী তীরের গ্রামের ছেলে আমি ।শত পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বেড়ে ওঠেছি ।তিতাসের সচ্ছ জল ,আর দখিনা বাতাসের টানে কত যে ঘর ছেড়ে পড়ে রয়েছিলাম নদী পাড়ে তার সংখ্যা গননার যোগ্যতা ও রাখে না ।এই ভাবে জীবনের নদে ভাসতে ভাসতে কবে যে ছোট্ট আমি বড় হয়ে ওঠলাম তা ভাবতেই চোখে ভেসে ওঠে গ্রীষ্মের দুপুরে তিতাসের জলে ঝাঁপিয়ে পড়া আর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ভৌমিক স্যারের বেত্রাঘাত খাওয়ার স্মৃতি ।


কল্পনার টানায় চড়ে ছুটে যায় শৈশবের মাছ ধরা আর রাতের বেলা শুয়ে শুয়ে হিন্দুপাড়ার কীর্তনগীতী শুনার দিনগুলোতে । আমার শৈশব ছিল ছন্নছাড়া আর বেখেয়ালিপনায় ভরা ।আমি ছিলাম স্বইচ্ছেই বেড়ে ওঠা মানুষ যার হৃদয় জুড়ে কান্নার হাহাকার ছাড়া আর কিছুই ছিল না ।আজ আমি আমার জীবনে প্রকৃত সুখ খোঁজে পাওয়ার গল্পটাই লিখতে বসেছি । গল্পটা সবার কাছে ভাল নাও লাগতে পারে কারন ,আমি হয়তো জীবনের সেই সত্যতাকে ফুটিয়ে তুলতে পারব না জ্ঞানীদের মতো ।সেই সত্যতা যা আমার পুরোটা জীবনের ব্যর্থতা দিয়ে পাপ্ত ।

সেই সুখ পাপ্তির গল্প ই করতে বসেছি । গ্রামছেড়ে শহরে এসে আধুনিক হবার চেষ্টায় ব্রত ছিলাম ।ভাল একটা কলেজে ভর্তি হলাম । নিজের কাছে নিজেকে যতেষ্ট স্মার্ট মনে হতো ।তাই একটা প্রেম করা আর তার সে সঙে সেই প্রেমিকা রমনীর সাথে দেহভাগ করার ইচ্ছে মাথায় গজিয়ে ওঠেছিল ।তাছাড়া ঘনিষ্ট বন্ধু সবাই বলতো প্রেম করার কথা ।তাই আর পিছনে তাকালাম না ,প্রেম করেই ফেললাম নীলা নামক এক তরুণীর সাথে ।তরুণী খুব চতুর আর আবেদনময়ী ছিল তাই ভোগ করতে হয়েছিল অনেক যন্ত্রনা ।গিফট দিতে দিতে আর শপিং করতে করতে যখন বাবার অর্থের যোগান বন্ধ হয়ে গেল তখন সেই নীলা আমাকে কষ্টের আগুনে ফেলে নতুন কারো হাত ধরলো ।

আমি কাঁদলাম তার দেওয়া কষ্টের ফলে কিন্তু ,নারী বড়ই হীন মনের হয়ে থাকে ।তাই সে ফিরে ও চাইলো না । বেচারা আমি তখন মনের কষ্টে দেবদাস । তারপর চার পাঁচ মাস পরেই আরেকটা প্রেম হলো রিয়ার সাথে ।রিয়া নাকি আমায় প্রচন্ড রকম ভালবাসতো ।সে নীলার মতো ছিল না ।তবো ও আমি কোথায় যেন তৃপ্ত হতে পারতাম না তাকে ভালবাসে ।তার সাথে খুব ঘনিষ্ট হয়েছি কিন্তু তারপরে ও কোথায় যেন ,কিছু না পাওয়ার চিৎকার ছিল । আমার মনটা প্রায় তখন খারাপ থাকতো পারিবারিক কারনে ।অযথা রাগারাগি করতাম ,আর মাকে কষ্ট দিতাম ।খুব কষ্ট লাগতো ।রিয়ার সাথে ও কথা বলতাম না ।ফোনটা অফ করে ছাদে চুপ করে বসে থাকতাম ।

তখন প্রায় খেয়াল করতাম পাশের ছাদ হতে একটা ছেলে আমাকে দেখছে ।আমার দৃষ্টি তার দিকে পড়তেই সে চোখ সরিয়ে নিত তবে পুনরায় তাকাতো ।তার এমন লুকোচুরি আমার মন ভাল করে দিত ।কেন যে ভাল হয়ে যেত মন তাকে দেখলে বুঝতাম না ।তবে যেদিনি মন খারাপ থাকতো ঐ দিন ই ছাদে তাকে খোঁজতাম যেন কষ্টগুলো ভুলতে পারি । একদিন রিয়া আর আমি পায়ে হেঁটে লাইব্রেরীর দিকে যাচ্ছিলাম ।হঠাৎ ,ঐ ছেলেটা সামনে পড়লো ।সে তাকিয়েছিল একনজরে আমার দিকে ।আমি ও তাকালাম ।কী ধরনের অদ্ভুত একটা লজ্জা যেন অনূভোব করলাম আমি ।

বুঝতে পারিনি একটা ছেলের চোখে কি ছিল যা রিয়ার চোখে নেই ।ঐ ছেলেটির দৃষ্টিতে কেন এত সুখ ছিল যা আমি রিয়ার চোখে পায়নি । রিয়া বিষয়টা খেয়াল করে প্রশ্ন করলো তাকে চিনি কিনা ।আমি না উত্তর বলে চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম । একদিন সকালে ঘুম বৃষ্টি হচ্ছিল ।আমার মন খারাপ থাকলে বৃষ্টিতে ভিজি ।ঐদিন ও মনটা খুব খারাপ ছিল তাই বৃষ্টিতে ভিজছিলাম ।পড়নে ছিল ট্রাওজার ।ট্রাওজারটা নাভীথেকে অনেক নিচে চলে গিয়েছিল ।যার ফলে নাভীর নিচের পশম রেখা বোঝা যাচ্ছিল ।অন্যদিকে বুকের পশমের মধ্যে জমে থাকা ফোটা ফোটা জল বিন্দু ।

আমি বৃষ্টিতে ভিজতেছিলাম ।হঠাৎ ,দেখলাম পাশের বাসার ছাদ থেকে ঐ ছেলেটা আমাকে দেখছে ।সে আমার খালি শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে ।আমার মনে অজানা এক প্রেমবিন্দু জেগে ওঠল । খুব ইচ্ছে করছিল তাকে ডেকে কথা বলি ।তাই ডাকদিলাম ।সে জবাব দিল ।কথা হলো তার সাথে ।নাম তার সৈকত ।ফ্ল্যাটে ওঠেছে তিন মাস ।ইত্যাদি ইত্যাদি কথার শেষে বৃষ্টি থামল । রূমে ঢুকতেই কেমন তার কথা মনে পড়তে লাগলো । মন থেকে কিছুতেই সরাতে পারছি না তাকে ।সে যেন জোকের মতো বসে ছিল আমার হৃদয়ে ।বারবার ইচ্ছে করছিল তার কাছে ছুটে যায় ।

কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ।আর কখনো এমন ভাবে মনে পড়েনি কাউকে ।এমনকি রিয়া ,নীলা তাদেরকে ও না । তার মানে কি এই যে ,আমি তাকে ভালবেসেফেলেছি ।কিন্তু ,আমি তো সমকামী নয় ?মাথা ঘুরে যাচ্ছিল ।এটা কি হচ্ছে আমার সাথে ।এমনি কথা ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে বের হচ্ছিলাম পথে ফোন দিল রিয়া ।আজকে রিয়ার ফোনটা খুব রিরক্তকর লাগলো ।রেসিভ করেনি । দিনগুলো কাটছিল যেমন করে কাটার কথা তার বিপরীত ভাবে ।মনের উদাসীনতা আর সৈকতের কথা ও জমতে লাগলো বরফের মতো । ভাগ্য আমাদের কাছাকাছি এনে দিল এক দৈবশক্তিতে ।

ঘাটনা ঘটে গেল দুর্ঘটনার মতো করে ।বাবার একটা একসেডিং হয়ে যায় সেদিন ।আমি রিয়াকে নিয়ে পার্কে বসেছিলাম ।ফোন আসলো মার ।ছুটে গেলাম হাসপাতালে ।প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল ।আমি যখন পৌঁছি সেখানে সৈকতকে দেখতে পায় । তখন বাবা অনেকটা সুস্হ্য ।মা সৈকতের অনেক প্রশংসা করলো ।তার কাছে আমি ঐদিন কৃতজ্ঞতায় ঝুকে ছিলাম ।ঐদিন যদি সৈকত বাবাকে ঠিক সময় হাসপাতালে না আনতো আর ব্লাড ব্যাংকে না পাওয়া রক্ত তার শরীর থেকে দিতো তাহলে হয়তো বাবাকে আর আমাদের মাঝে পেতাম না ।

ঐদিনের পর থেকেই মনে হচ্ছিল সৈকত যেন আমার শত জীবনের আপন ।আমি সমকামী নাকি বিষমকামী তা ভুলে সকল দ্বিধা দন্দের অবসান গটিয়ে তাকে ভালবাসতে লাগলাম মনের গভীর থেকে যেখান থেকে নীলা অথবা রিয়া কাউকেই ভালবাসিনি ।এর পর থেকেই আমার আর সৈকতের কাছে আসা । সন্ধ্যারপর দুজনে একত্রে বসে গল্প করতাম ।সেই সন্ধ্যা কখনো ভোর হয়ে যেত । অফটাইমে ফেবুতে চ্যাটিং করতাম ।একদিন না দেখলে অন্তর আত্মা কেঁদে ওঠতো ।সৈকতের মুখের ভাষা আর হাসি আমাকে ভাবাতো । জীবনে এর চেয়ে সুখ কোনদিন পায়নি ।ঐদিকে রিয়ার প্রতি সকল ফিলিক্স নষ্ট হয়ে গেল ।রিয়ার সাথে দেখা করি না ,কথা বলি না ,মেসেজের রিপ্লে করি ।কারন ,আমি তখন মাত্র সৈকতকে ভালবাসতাম ।

রিয়ার প্রতি বিন্দু পরিমাণ আবেগ আমার ছিল না । একদিন রিয়া আমাকে বললো তার সাথে আগের মতো সময় কাটায় না কেন ?ইত্যাদি ইত্যাদি ।আমি বারবার এড়িয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু সে জোর করতে লাগলো ।তাই রাগে বলেই ফেললাম যে .আমি সৈকত নামের একটা ছেলেকে ভালবাসি ।আমার কথা শুনে রিয়া আমাকে নিন্দা করলো অনেক ।আমি কিছুই বলেনি ।সে যে বিষয়টার নিন্দা করছে সেই বিষয়টাই আমার প্রকৃত চেহারা । রিয়া শুধু আমার নিন্দা করেই থেমে থাকেনি ।সে সৈকতের কাছে গেল ।আর তাকে অকথ্য ভাবে অনেক কথা বলার পর আমার দুর্নাম রটিয়ে বলল যে ,আমি মানুষকে শুধু ভোগ করি ।

ঐদিন একটা নারীর বিশ্রীরুপ দেখে আৎকে ওঠেছিলাম ।রিয়ার সাথে কথা বলার পর সৈকত অনেক কেঁদেছিল । রাত তখন অনেক ঐদিন ।দুজনের মন খারাপ থাকাই সন্ধ্যায় কথা হয়নি ।আমি ছাদে ছিলাম ।সৈকত পাশে এসে দাঁড়াল ।আমি তার দিকে তাকালাম ।সূর্যের আলো তার গালে এসে পড়ছিল ।তাকে মনে হচ্ছিল দেবদূত ।আমি তার দু বাহুতে ধরে আমার দিকে ঘুরিয়ে বললাম ,রিয়ার কথা বিশ্বাস কর যে আমি খারাপ চরিত্রের ?সৈকত মাথা ঝাকিয়ে বলল ,না ।আমার চোখে পানি ছিল ।অশ্রুভেজা কন্ঠে তাকে বললাম ,আমাকে ভালবাস না ?

সৈকত আমাকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো ,আমি তোমায় ভালবাসি ।আমি তোমায় ভালবাসি ।আমার বুকে সুখের ঝড় বয়ে যাচ্ছিল ।তার মুখে চেপে ধরে বললাম চুপ ।সে তার শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ।আমি তার চোখ দুটিতে কিস করে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম । আমাদের ভালবাসা ছুটে চলছে দুরন্ত ঘোড়ার বেগে ।জানি না এই পথ শেষ হবে কিনা ।সমাজ ,ধর্ম আর ভদ্রদের কাছে আমরা কলঙ্কিত ।কিন্তু ,আমি জানি কত প্রেম আর ত্যাগের ফল আমাদের এই সম্পর্ক ।শত লোকের কাছে অপবিত্র হলে ও আমাদের কাছে পবিত্র ই ।

No comments:

Post a Comment